Kazi Saifuddin Hossain
  • The High Status of the Prophet and the Heresy of Mawdoodi and Jama'at Henchmen
  • Ahl-i Sunnah --- The Right Path in Islam
  • Seeking Help from the Pious Ones of Allah
  • Waseela (Intermediaries)
  • Visiting the Holy Shrine of the Prophet (peace be upon him)
  • তাসাউফ
  • তাওয়াসসুল
  • আউলিয়ার মাযারে সাহায্য প্রার্থনা
  • সূফীবাদের উৎস
  • রাসূলপ্রেম ও তাঁর আনুগত্য
  • মীলাদুন্নবী-বিষয়ক ২টি প্রবন্ধ
  • শানে রেসালাত ও ভ্রান্ত মওদূদীবাদ
  • ’এয়া শায়খ মদদ’ বলে পীর-বুযূর্গদের আহ্বান
  • তাসাউফের অর্থ ও তাৎপর্য
  • বেলায়াত ও কুরবাত
  • কামেল পীরের কাছে বায়াত হবার আবশ্যকতা
  • পীরের প্রতি মুরীদের পালিত আদব
  • আত্মার পরিশুদ্ধি
  • নব্য ফিতনা 'সালাফিয়্যা'
  • কুতুবে যমান হযরত কাজী আসাদ আলী (রহ:)
  • সৈয়দ বেরেলভী সম্পর্কে যুগ-জিজ্ঞাসা
  • চির অম্লান জশনে জুলুসে ঈদে মীলাদ আন্ নবী (দ:)
  • মহানবী (দ:) নূর
  • তাযকিয়ায়ে আহলে বায়ত
  • মহানবী (দ:)-এর এলমে গায়ব: সাইফুল ইসলাম রুবাইয়ে
  • মহানবী (দ:) হাযের ও নাযের
  • মুফতী তকী উসমানীর মীলাদবিরোধী ফতোওয়ার রদ
  • বুযূর্গানে দ্বীন রূহানীভাবে জীবিত
  • দ্বীনী জ্ঞানে অজ্ঞ এক ব্যক্তির প্রতি জবাব
  • দারুল ফাতওয়া অস্ট্রেলিয়া: মীলাদুন্নবী (দ:)
  • মওলানা রূমী (রহ:)-এর দৃষ্টিতে সত্যপন্থী সূফী
  • মওলানা রূমী (রহ:) - ঐশী প্রেমের দর্পণ
  • আল্লাহতা’লা যে উদ্দেশ্যে বিশ্বজগত সৃষ্টি
  • শবে বরাতের ফযীলত
  • তাকলীদ
  • প্রকৃত ’শিরক’কারী কে?
  • তারাবীহ নামায ২০ রাকআতের দলিল
  • মো’মেনবৃন্দের পরিচয় ও তাঁদের করণীয়
  • ইসলামে কুরবানীর বিধান
  • কলেমা-ই রেসালাতের বাণী
  • নামায
  • আরশে লেখা কলেমা-বাক্য
  • হাকীকতে নূরে মোহাম্মদী (দ:)
  • মে’রাজ মাহফিল আয়োজন বেদআত নয়
  • মে’রাজ রাতে মহানবী (দ:) কি আল্লাহকে দেখেছিলে&
  • ২০ রাক’আত তারাবীহ আদায়ের পদ্ধতি
  • মহানবী (দ:) কি আইএস সম্পর্কে আমাদের সতর্ক করে
  • রাসূল (দ:)-এর এলমে গায়ব শুনলে যাদের গা জ্বলে তù
  • আম্বিয়া (আ:) আমাদের মতো মানুষ নন
  • ইমাম হুসাইন (রা:)-এর হত্যর দায় এয়াযীদের
  • মহানবী (দ:) কি নিজের মীলাদ পালন করেছিলেন?
  • প্রিয়নবী (দ:) নূরুল বশর
  • রাসূলপ্রেম ও তাঁর অনুসরণ
  • মহানবী (দ:)-এর প্রতি দাঁড়িয়ে সালাম পেশ
  • আল-কুরআন ৮:৩ অপব্যাখ্যার রদ
  • তারাবীহ নামায সম্পর্কিত আহলুস্ সুন্নাহ’র
  • নামাযে পুরুষের হাত বাঁধা

Tasawwuf's meaning and significance

4/21/2013

0 Comments

 
তাসাউফের অর্থ ও তাৎপর্য

(চিশ্তীয়া তরীকার বিশেষ রেফারেন্সসহ)

মূল: শায়খ সিরাজ হেনড্রিকস (দক্ষিণ আফ্রিকা)

অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন


ইসলাম ধর্মের বিশিষ্ট বুযূর্গানে দ্বীনবৃন্দ বিভিন্নভাবে তাসাউফের (সূফীতত্ত্বের) সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। সুলতানুল আরেফীন শায়খ সেহাবউদ্দীন সোহরাওয়ার্দী (রহ:) তাঁর প্রণীত আওয়ারিফুল মা’আরিফ (গোপন রহস্যের সুরভি) গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে তাসাউফ সম্পর্কে সহস্রাধিক সংজ্ঞা বিদ্যমান। তবে এ সব সংজ্ঞার কয়েকটির দিকে দ্রুত দৃষ্টিপাত করলে দেখা যাবে যে এগুলো মূলত শব্দ ও তাকিদের ক্ষেত্রেই ভিন্নতা বহন করছে। এ প্রবন্ধের প্রয়োজনে আমরা এমনি তিনটি সংজ্ঞা এখানে পেশ করবো:

শায়খ আবু বকর শিবলী (রহ:) তাসাউফের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন, “এর প্রারম্ভে রয়েছে খোদা তা’লার ভেদের রহস্য (মা’রেফত) এবং শেষে রয়েছে তাঁর একত্ব (তাওহীদ)।”

হযরত জুনাইদ বাগদাদী (রহ:) বলেন, “. . . নিজ সত্তাতে মৃত কিন্তু খোদা তা’লার মাঝে জীবিত”।

শায়খুল ইসলাম যাকারিয়া আনসারী বলেন, “সূফীবাদ শিক্ষা দেয় নিজ সত্তার পরিশুদ্ধি, নৈতিকতার উন্নতি এবং নিজ অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক জীবনকে গড়ে তোলা, যাতে করে চিরস্থায়ী আশীর্বাদ লাভ করা যায়। এর সারবস্তু হলো আত্মিক পরিশুদ্ধি এবং লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো চিরস্থায়ী কল্যাণ ও আশীর্বাদ লাভ।”

এই তিনটি সংজ্ঞা - যার প্রথমটি আকল্ তথা বুদ্ধিমত্তার সাথে সম্পৃক্ত, দ্বিতীয়টি হাল্ তথা ভাব বা আধ্যাত্মিক অবস্থার সাথে সম্পৃক্ত এবং তৃতীয়টি আখ্লাক তথা নৈতিকতার সাথে সম্পৃক্ত- তাতে সূফী অন্বেষণের মৌলিক দিকগুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

অতএব, প্রথম সংজ্ঞাটিতে বাস্তবতার চূড়ান্ত প্রকৃতি রূপায়িত হয়েছে এ মর্মে যে একমাত্র আল্লাহ তা’লার দয়ায় ও ইচ্ছায়ই সকল বস্তু ও জীব অস্তিত্বশীল। দ্বিতীয়টিতে নফসানীয়াত তথা কুপ্রকৃত্তি বা একগুঁয়ে সত্তাকে পরিত্যাগের গুরুত্বের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। দম্ভ, কপটতা ও আত্মকেন্দ্রিকতা হলো আল্লাহ্ তা’লা ও মানুষের মাঝে সবচেয়ে বড় পর্দা।

হযরত রাবেয়া আল্ আদাউইয়্যা (রহ:) এই হাল বা ভাবোম্মত্ত অবস্থা সম্পর্কে বলেন, “আমি যদি আমার নিজ সত্তার ব্যাপারে মাগফেরাত কামনা করি, তাহলে আমাকে আবার ক্ষমা (মাগফেরাত) চাইতে হবে।” তিনি ব্যক্তি সত্তার (নফস্) স্বীকৃতিকেই সবচেয়ে বড় পাপ বিবেচনা করতেন। তৃতীয় সংজ্ঞাটির বিবেচ্য বিষয় হলো মানব সত্তাকে সর্বোত্তম নৈতিকতা ও মূল্যবোধ দ্বারা বিভূষিত করা। তাযকিয়া তথা আত্মিক পরিশুদ্ধি ও তাহলিয়্যা তথা বিভূষণের দু’টি পদ্ধতির মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া সম্ভব হয়ে ওঠে। অর্থাৎ, সকল দূষণীয় ক্রটি-বিচ্যুতি থেকে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে সকল প্রশংসনীয় গুণাবলী দ্বারা বিভূষিত হওয়া।


‘সূফী’ সংজ্ঞাটির উৎপত্তি

সূফী শব্দটির উৎপত্তি সম্পর্কে অভিধান রচয়িতাবৃন্দ বেশ কিছু মূল শব্দকে চিহ্নিত করেছেন। সবচেয়ে ব্যাপকভাবে গৃহীত যে শব্দটি তা হলো ‘সূফ’, যার মানে সুতো, পশম। প্রাথমিক যুগের সূফীবৃন্দ দুনিয়া থেকে নিজেদের অসম্পৃক্ততা প্রকাশের জন্যে এবং বস্তুবাদকে প্রত্যাখ্যানের জন্যে সুতোর জামাকাপড় পরতেন।

অন্যান্য সংজ্ঞা মধ্যে রয়েছে-

সাফা, যার অর্থ পরিশুদ্ধি;

সাফউইয়ী, যার মানে মনোনীত জন;

সুফফা, যা কোনো নিচু বারান্দাকে বোঝায়। মহানবী (দ:)-এর যমানায় কিছু সাহাবী নিজেদেরকে দুনিয়াবী কর্মকান্ড থেকে দূরে সরিয়ে কৃচ্ছতাপূর্ণ জীবন যাপন করতে থাকেন। তাঁরা ‘আসহাবে সুফফা’ নামে সমধিক প্রসিদ্ধ। মহানবী (দ:)-এর মসজিদের পাশে একটি ছোট বারান্দায় তাঁরা খোদার ধ্যানে সর্বদা মগ্ন থাকতেন।

সাফ্ফ, যার অর্থ সারি, লাইন। নামাযে প্রথম কাতার বা সারিকে বিশেষ মর্যাদা দেয়া হয়েছে, কেননা তা আধ্যাত্মিকতায় প্রথম সারিকে প্রতীকায়িত করে।

শব্দের উৎপত্তি ও ইতিহাস সংক্রান্ত বিজ্ঞান অনুযায়ী যে শব্দটি উৎস হিসেবে যোগ্যতা অর্জন করেছে তা হলো ‘সুফ’। তথাপি অন্যান্য শব্দগুলোকেও সাধারণত এতদসংক্রান্ত আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে থাকে; এর একমাত্র হলো এই যে সূফী তরীকার বহুবিধ বৈশিষ্ট্যের কোনো না কোনো একটিকে এগুলো প্রতিফলন করে।

তাসাউফের উৎসসমূহ

তাসাউফ ইসলাম ধর্মবহির্ভূত উৎস থেকে আবির্ভূত হয়েছে- এটা দেখাতে পূর্ববর্তী প্রাচ্যদেশ-সম্পর্কিত গবেষণাগুলো যথেষ্ট কষ্ট স্বীকার করেছিল। এ সব গবেষণা অনুযায়ী, ’ইসলাম ধর্ম আরবের শুকনো পতিত জমি থেকে এসেছিল, আর তাই তাতে কখনোই এতো গভীর ও অনুপ্রেরণাদায়ক জ্ঞানের বীজ অন্তর্নিহিত থাকতে পারে না; সূফীদের আশীর্বাদপুষ্ট অন্তর্দৃষ্টির শেকড় কোনোক্রমেই মরুভূমিতে প্রোথিত হতে পারে না’। এই একপেশে নীতির কারণে অনেক পশ্চিমা গবেষক কুরআনে ও মহানবী (দ:)-এর হাদীসে নিহিত অন্তর্দৃষ্টি ও দিব্যজ্ঞান সম্পর্কে উপলব্ধি করতে পারেন নি। তবে সূফীবাদ সংক্রান্ত কুরআনী উৎসগুলো সন্দেহাতীভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

সূফীবৃন্দ তাঁদের অবস্থানের পক্ষে আল কুরআনের যে দলিলাদি পেশ করেন, তার মধ্যে সূরা ওয়াকিয়াহর আয়াতে করীমাগুলো প্রণিধানযোগ্য। এসব আয়াতে আল্লাহ তা’লা মানুষদেরকে তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত করেছেন।

১। আসহাব আল মাশআমাহ্ তথা বাম হাতের দিকের মানুষ;

২। আসহাব আল্ মায়মানাহ্ তথা ডান হাতের দিকের মানুষ;

৩। মুকাররাবুন তথা সেই সব বুযূর্গ যারা আল্লাহর নিকটবর্তী; এঁদেরকে ‘অগ্রবর্তী’ ও বলা হয়েছে।
প্রথম দলটি ঈমান গ্রহণ করে নি। দ্বিতীয় দলের অন্তর্ভুক্ত হলেন নেককার মুসলমানবৃন্দ যারা আল্লাহর প্রতি তাঁদের দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট। তাঁদের সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে-


“পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে এক দল এবং পরবর্তীদের মধ্য থেকে এক দল” (সূরা ওয়াকিয়াহ্ ৩৯-৪০ আয়াত)। আর সর্বোপরি রয়েছেন মুকাররাবুন। তাঁরা হলেন মু’মেন বান্দাদের মধ্যে এমনি একটি বিশেষ দল, যাঁরা আধ্যাত্মিক উন্নতির সর্বোচ্চ শিখরে উপনীত হয়েছেন। তাঁদেরকে বেশির ভাগ সময় খাওয়াস্ আল্ খাসওয়াস্ তথা মনোনীতদের মাঝে মনোনীত বলে বর্ণনা করা হয়ে থাকে। এঁদের ঈমানের প্রাচুর্যই এঁদেরকে আল্লাহ তা’লার নৈকট্যের মকাম বা মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে।

সূরা ওয়াকিয়াহতে এই বুযূর্গদের সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে: “পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে একদল; এবং পরবর্তীদের মধ্য থেকে স্বল্প সংখ্যক” (১৩-১৪ নং আয়াত)। এই উচ্চ মার্গের ঈমান ও আধ্যাত্মিক উন্নতিই সূফীবৃন্দের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করে।

বিশ্বনবী (দ:)-এর বর্ণিত একটি হাদীসে কুদসীতেও আল্লাহ তা’লার নৈকট্যের বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। আল্লাহ তা’লা এরশাদ ফরমান-

”মা যালা ‘আব্দী ইয়াতাকাররাবু ইলাইয়া বিন-নাওয়াফেলে হাত্তা আহবাবতুহু ফা-কুনতু সাম’আহু আল্লাযী ইয়াসমা’উ বিহী; ওয়া বাসরাহু আল্লাযী ইয়াবসিরু; ওয়া ইয়াদাহু আল্লাযী ইয়াবতিশু বিহী; ওয়া রিজলাহু আল্লাতী ইয়ামশী বিহা”।

অর্থ: আমার বান্দা নফল (তরীকার রেয়াযত) এবাদত-বন্দেগী দ্বারা আমার এতো নিকটবর্তী হন যে আমি তাঁকে ভালবাসি; এতো ভালবাসি যে আমি তাঁর কুদরতী কান হই যা দ্বারা তিনি শোনেন; তাঁর কুদরতী চোখ হই যা দ্বারা তিনি দেখেন; আমি তাঁর কুদরতী হাত হই যা দ্বারা তিনি কাজকর্ম করেন এবং তাঁর কুদরতী পা হই যা দ্বারা তিনি চলাফেরা করেন” (বোখারী)।

আল্লাহ তা’লার নৈকট্য ও তাঁর ভালবাসার সাথে যখন তাঁর সৌন্দর্যের বিষয়টি যুক্ত হয়, যেমনিভাবে হাদীস্ শরীফে বর্ণিত হয়েছে- “নিশ্চয় আল্লাহ্ তা’লা নিজে সুন্দর এবং সুন্দরকেও ভালবাসেন” (মুসলিম), তখন সূফী-দরবেশ রাবেয়া আল্ আদাউইয়্যার (রহ:) কথার মর্মও বোধগম্য হয়; তিনি বলেছিলেন- “হে আল্লাহ্! আমি দোযখের ভয়ে আপনার এবাদত করে থাকলে আপনি আমায় তাতে পুড়িয়ে খাক করে দিন; আর যদি বেহেশতের আশায় এবাদত করে থাকি, তবে তা থেকে আমায় বঞ্চিত করে দিন; কিন্তু আপনার খাতিরে যদি আমি আপনার বন্দেগী করে থাকি, তাহলে আপনার চিরস্থায়ী সৌন্দর্য দর্শন থেকে আমায় বঞ্চিত করবেন না”!

এই আধ্যাত্মিক আকাঙ্ক্ষার আলোকেই আমরা সূফীবৃন্দের বিভিন্ন ভক্তিমূলক কর্মকান্ডের ঐকান্তিকতা উপলব্ধি করতে সক্ষম হবো।

পূর্ববর্তী যুগের সূফীবৃন্দের মধ্যে উজ্জ্বল নক্ষত্র হলেন হযরত হাসান আল্ বসরী (রহ:- বেসাল ৭২৪ খৃষ্টাব্দ), হযরত ইবরামীম ইবনে আদহাম (রহ:-বেসাল ৭৭৭ খৃষ্টাব্দ), হযরত রাবেয়া আল্ আদাউইয়্যা (রহ:- বেসাল ৮০১ খৃ:), হযরত ফুযাইল ইবনে আয়ায (রহ:- বেসাল ৮০৩ খৃষ্টাব্দ), হযরত মা’রূফ কারখী (রহ:- বেসাল ৮১৫ খৃষ্টাব্দ), হযরত আবু আব্দুল্লাহ্ আল্ মুহাসিবী (রহ:- বেসাল ৮৫৭ খৃষ্টাব্দ), হযরত সিররী সাকাতী (রহ:- বেসাল ৮৬৭), হযরত বায়েযীদ বোস্তামী (রহ:- বেসাল ৮৭৪ খৃষ্টাব্দ) এবং হযরত আবুল কাসেম জুনাইদ আল্ বাগদাদী (রহ:- বেসাল ৯১০ খৃষ্টাব্দ)।

পীর ও মুরীদের সম্পর্কের মাঝে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল। প্রথমটি হলো ইলবাসুল খিরকা তথা জোড়াতালি দেয়া একটি জামা পরিধান যা মুরীদের তরীকায় বা তাসাউফে দাখিল হবার ইঙ্গিতবহ ছিল। দ্বিতীয় দিকটি তালকিনুয্ যিকর নামে জ্ঞাত, যার অর্থ হলো মুরীদ কী ধরনের যিকর পালন করবে সে সম্পর্কে পীরের নির্দেশ। তৃতীয় দিকটিকে সোহবত বলে, যা পীরের সান্নিধ্যের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য জ্ঞাপন করে। এসব দিক প্রাথমিক যমানা থেকেই সূফী তরীকাহর অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে চলে আসছে। বস্তুতঃ এসব আচারের অধিকাংশই রাসূলে খোদা (দ:)-এর সুন্নাহতে পাওয়া যায়। বিভিন্ন ধরনের যিকরসহ সূফীবৃন্দের শিক্ষাসমূহ পীরের কাছ থেকে মুরীদের কাছে ধারাবাহিক পরম্পরায় হস্তান্তরিত হয়ে আসছে; এটিকে সিলসিলা বলে। এসব সিলসিলার মাধ্যমে এবং এজাযত প্রথার দ্বারা সূফীবৃন্দের শিক্ষাসমূহ আমাদের আধ্যাত্মিকতার ঐতিহ্যগত অংশ হিসেবে সংরক্ষিত হয়েছে। এজাযত হলো পীরের শিক্ষাসমূহ (তরীকা)-কে আরও প্রসারিত করার জন্যে মুরীদ (খলীফা)-কে পীরের দেয়া অধিকার।

সূফীবাদ তিন-ধারা বিশিষ্ট প্রক্রিয়া:

১। শরীয়ত- এটির বিধান সম্পর্কে জানা এবং তা কঠোরভাবে মেনে চলা;

২। তরীকত- মহানবী (দ:) ও তাসাউফের বরেণ্য ও বিজ্ঞ বুযূর্গবৃন্দের নির্দেশিত আধ্যাত্মিক প্রথার (যেমন যিকর) অনুশীলন বা চর্চা

৩। হাকিকত- সেই আধ্যাত্মিক অন্তর্দৃষ্টি বা দিব্যদৃষ্টি লাভ যার দর্শন হলো সকল বস্তুই আল্লাহ্ তা’লা থেকে আগত এবং তাঁরই মালিকানাধীন।

শরীয়ত ও তাসাউফ

ইসলাম ধর্মের প্রাথমিক যুগে সূফী মতাদর্শ সম্পর্কে শরীয়তের কিছু আলেমের মনে বিভ্রান্তি দেখা দিলে সর্বজনমান্য ও স্বনামখ্যাত সূফী ও আলেমে দ্বীন ইমাম আবু হামিদ আল্ গাযযালী (রহ: ১০৫৭-১১১১ খৃষ্টাব্দ) তাঁর লেখনীর মাধ্যমে একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থা ফিরিয়ে আনেন। ইসলাম ধর্মের ফেকাহ্ (বিধানবিষয়ক শাস্ত্র) ও সূফী (আধ্যাত্মিকতা বিষয়ক দর্শন) ভাবধারার মধ্যে সুসমন্বয় সাধন তাঁর অমূল্য ও সফল কীর্তি। দুটোর কোনোটিকে প্রত্যাখ্যান করলে ইসলাম ধর্ম হাস্যস্পদ বস্তুতে পরিণত হয়।

চিশ্তীয়া তরীকা

ইসলামী সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে, বিশেষ করে স্থাপত্য, শিল্পকলা ও সাহিত্যে সূফী তরীকাগুলোর অবদান সুবিশাল। চিশ্তীয়া তরীকা হলো তেমনি একটি সূফী মতাদর্শ।

হযরত খাজা মঈনউদ্দীন চিশ্তী (রহ:)-এর মাধ্যমে চিশ্তীয়া তরীকা ব্যাপক প্রসার লাভ করে। এই সিলসিলার মূলে হযরত হাসান বসরী (রহ:) রয়েছেন। এই তরীকা আফগানিস্তানের চিশ্ত নগরীতে গোড়াপত্তন লাভ করে।

হযরত খাজা আজমেরী (রহ:)-এর তরীকার শিক্ষাসমূহ তাঁর সুযোগ্য খলীফা হযরত কুতুবউদ্দীন বখতিয়ার কাকী (রহ: -বেসাল ১২৩৬ খৃষ্টাব্দ) কর্তৃক আরও প্রসার লাভ করে। তাঁর খলীফা হলেন আরেক সূফী প্রাণপুরুষ হযরত শায়খ ফরিদউদ্দীন গঞ্জে শাকর (রহ:- বেসাল ১২৬৫ খৃঃ)। তাঁর খলীফা মাহবুবে এলাহী হযরত নিযামউদ্দীন আউলিয়া (রহ: বেসাল ১৩২৫ খৃঃ) ভারত উপমহাদেশে ও উত্তরে চীন দেশে চিশ্তীয়া তরীকাকে ব্যাপক প্রচার-প্রসার করেন। তিনি সূফীকুল শিরোমণি হওয়ার পাশাপাশি শরীয়তেরও বিজ্ঞ আলেম ছিলেন। তাঁকে যুগের আধ্যাত্মিক জগতের ইমাম বিবেচনা করা হতো।

উপসংহার

আসাউফ ইসলাম ধর্মের আধ্যাত্মিক দিক ছাড়া আর কিছু নয়। পদ্ধতি হিসেবে তরীকা হলো ওই দিকটিকে সংরক্ষণ ও অর্জনের প্রয়াস। আর শরীয়ত হলো এমনি একটি ঐশী বিধান যার মধ্যে ওই আধ্যাত্মিকতা তার সুনির্দিষ্ট আকার তথা রূপ পরিগ্রহ করে। ইসলামের এই তিনটি অংশ গোটা ধর্মের অবিচেছদ্য অঙ্গ ছাড়া কিছু নয়।

ইমাম মালেক (রহ:) কী সুন্দর বলেছেন, “যে ব্যক্তি ফেকাহ্ শিক্ষা করে কিন্তু তাসাউফকে অবহেলা করে সে ধর্ম প্রত্যাখ্যানকারী হিসেবে সাব্যস্ত হয়; আর যে ব্যক্তি তাসাউফ শিক্ষা করে কিন্তু ফেকাহকে অবহেলা করে, সে বিচ্যুত হয়। কিন্তু যে ব্যক্তি দুটোর মধ্যে সমন্বয় সাধন করে, সে অবশ্যই সত্যে পৌঁছুতে সক্ষম হয়।”

যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন তরীকার আবির্ভাব সম্পর্কে ঐতিহ্যবাহী একটি সূফী প্রবাদ আছে- “তাওহীদ (একত্ববাদ) এক, কিন্তু আল্লাহ্ তা’লাকে পাবার রাস্তাসমূহ আদম (আ:)-এর যুগ থেকে আগত মানুষের সংখ্যার মতোই ভিন্ন ভিন্ন।” এই ভিন্ন ভিন্ন পথগুলোকে উম্মত মোহাম্মদী আল্লাহ্ পাকের করুণা হিসেবে দেখে থাকেন।

[সংস্কৃত এই প্রবন্ধটি’র লেখক হলেন মক্কা মোকাররমার বিশিষ্ট শায়খ মোহাম্মদ আলাউয়ী মালেকীর ভাবশিষ্য। তিনি এবং তাঁর ছোট ভাই শায়খ আহমদ হেনড্রিকস্ মক্কার উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সনদপ্রাপ্ত। এটি www.sunnah.org/tasawwuf/tasawwuf.htm  শীর্ষক ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত হয়েছে।]



0 Comments

    Shaykh Siraj Hendricks' article, translated into Bengali by Kazi Saifuddin Hossain

    Archives

    April 2013

    Categories

    All

    RSS Feed

Powered by Create your own unique website with customizable templates.